মার্চ অন- রুশিয়া জামান রত্না- রম্যগল্প
সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট অভিজিৎ বিকেলের সতেজ আবহাওয়া দেখে হাঁটতে বের হলেন। তার ইউনিট স্টাফদের কিচেন এক্সটেনশন করার সুবাদে সৈনিকদের সুবিধা হয়েছে ভেবে ওদিকে একবার ঢুঁ মারতে গেলেন। প্রকান্ড পুকুর পাড়ে পাকা রাস্তার ধারেই স্টাফ কিচেন৷ এই রাস্তা দিয়েই তিনি হাঁটছিলেন৷ বয়সে তরুণ এই সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট কিছুদিন আগেই এ পদে প্রমোশন পেয়েছেন। দায়িত্ব পালনে তাই সদা সতর্ক আর আন্তরিক৷ রাস্তা থেকে হাতের বামে মোড় দিয়ে সোজা কিচেন বিল্ডিং। চুনকাম এখনও ঠিকঠাক মতো করা হয়নি বা রং এখনো দেয়ালের গায়ে বসেনি। ঢোকার মুখেই দরজা দেখতে না পেয়ে আশ্চর্য হয়ে সুবেদারকে ডাকতে লাগলেন-
: সুবেদার সাব।
সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের গলার আওয়াজ পেয়ে সুবেদার এক দৌড়ে কিচেনের সামনে এসে দাঁড়ালো৷ আকাশ পাতাল প্রকম্পিত করে সেলাম ঠুকলো। জোরে হাঁক দিয়ে বললো-
: ইয়েস স্যার!!
অভি একটু বিরক্তি নিয়ে বললো-
: সে কি! কিচেনের দরজা কোথায়? কুকুর বেড়াল জন্তু জানোয়ার সমানে ঢুকছে আর বের হচ্ছে। এখনও দরজা লাগানো হয়নি কেন?
বসের মুখে এমন বিরক্তিকর অনুযোগ শুনে সুবেদার হরিহর সিংয়ের আত্মা কেঁপে উঠলো। নরম স্বরে বললো-
: স্যার, ইয়ে.. মানে… আঃ ম্যানেজ করা যায়নি স্যার!!
বলেই কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে।
এবার অভির ভীষণ রাগ হলো। গর্জন দিয়ে বললো:
: আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। Beg, borrow or steal. কিভাবে দরজা লাগাবে সেটা তোমাদের ইস্যু। আমি দরজা দেখতে চাই।
বলেই তিনি উত্তরের অপেক্ষা না করে সোজা হাঁটা দিলেন৷
পরদিন বিকেলে অভি আবারও হাঁটতে বের হলে হঠাৎ গতকালের ঘটনা মনে পড়লো। স্টাফ কিচেনের কাছে যেতেই দেখলেন চকোলেট রংএর সুন্দর ঝকঝকে দরজা। ভাবলেন হয়তো সুবেদার কোথাও থেকে ম্যানেজ করেছে। কোন কিছু না ভেবেই তিনি নিজের মতো করে হাঁটতে বের হয়ে গেলেন।
দুদিন পর ব্রিগেড কমান্ডার লেফটেন্যান্ট অভিজিৎকে ডেকে পাঠালেন। অসময়ে ব্রিগেড কমান্ডারের জরুরি তলব পেয়ে অভিজিৎ চিন্তায় পড়ে গেলেন৷ দুরুদুরু বুক নিয়ে হাজির হতেই ব্রিগেডিয়ার কমান্ডার আজমীর ধমক দিয়ে বললেন,
: কি হে!! তোমার ইউনিটের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে।
: কি অভিযোগ স্যার?
: চুরির! না না! ডাকাতির অভিযোগ!
: মানে? স্যার কি বলছেন এসব?
: হ্যা। তুমি যাও। এক্ষুনি তোমার সুবেদারকে জিজ্ঞেস করো যে সে দরজা কেন চুরি করতে গিয়েছিল? Go and ask him.
দরজা চুরির কথা শুনে অভিজিৎ গোলকধাঁধায় পড়ে গেলো। কি বিপদ! পড়িমরি করে এক ছুটে ইউনিটে এসে হাঁক দিলেন
: সুবেদার হরিহর….
হরিহর ডাক শুনতেই বিদ্যুত বেগে ছুটে এসে সেলাম ঠুকে বললো:
: ইয়েস স্যার!
: দরজা কোথায় পেয়েছো?
: স্যার, আপনাকে বলা যাবে না।
: বলার কি বাকি রেখেছো। ইতিমধ্যে ব্রিগেড কমান্ডারের কাছে অভিযোগ চলে গিয়েছে। শিগগির সব খুলে বলো৷
অবস্থা বেগতিক দেখে এবার সুবেদার মুখ খুললো,
: স্যার সেদিন আপনিই তো বললেন, বেগ-বোরো অর স্টিল। প্রথম দুটো পারিনি স্যার। তাই দরজা চুরি করেছি৷
ওর কথা শুনে অভিজিৎ দু’হাত মাথায় রেখে হতাশ হয়ে বললেন,
: এ কেমন কথা!!!
: জি স্যার। আপনি বলার পর ঐদিন রাতে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর একটিতে আমি ৬ জন জোয়ান নিয়ে গেলাম। ওখানে কেয়ার টেকারকে হাত পা বেঁধে ১৫ মিনিটের মধ্যে সবুজ রংএর দরজা খুলে এনে চকোলেট রং করে রাতেই সেট করে দিয়েছি স্যার। দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটা কোন রংএর ছিল। আর আসবার আগে ঐ ব্যাটার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে এসেছি। স্যার Everything was done within 15 minutes.
অভির মনে হলো কেউ যেন তাকে নিজের শৌর্য বীর্যের বীরত্বের কথা শোনাচ্ছে।
: তাই বলে তোমরা চুরি করবে?
: স্যার, আপনিই তো বললেন, Beg-borrow or steal
পরদিন ইউনিটের সুবেদারসহ বাকি ৬জনকে ডাকা হলো৷ পুরো ঘটনা শুনে ব্রিগেড কমান্ডার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। বহুক্ষণ হেসে তারপর নিজেকে স্থির করে বললেন-
: যাই করেছ আর যে জন্যই করেছো৷ পানিশমেন্ট তো পেতেই হবে৷ তোমাদের পানিশমেন্ট হলো পুরো মাঠ একবার চক্কর দেবে। বলেই হুংকার দিলেন-
: March on…
*লেখক: রুশিয়া জামান রত্না- সমাজসেবা অফিসার, মানিকগঞ্জ।
আরও পড়ুন- রুশিয়া জামান রত্নার কবিতা