মাওলানা রুমির জীবনী
মাওলানা রুমির জীবনী
মাওলানা রুমি নামে বিশ্বজুড়ে খ্যাত হলেও তাঁর প্রকৃত নাম হলো জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি। এছাড়াও মাওলানা রুমি, মৌলভী রুমি, জালাল উদ্দিন বালখী নামেও তিনি পরিচিত। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে জন্ম গ্রহণকারী মাওলানা রুমি একাধারে কবি, আইনজ্ঞ, ধর্মতাত্ত্বিক ও সুফীসাধক ছিলেন। মাওলানা রুমি খোরাসানের বালখ শহরে ১২০৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সুলতান বাহাউদ্দীন ওলাদ। বংশলতিকা অনুসারে মাওলানা রুমির নবম ধাপে সাহাবী হযরত আবুবকর (রাঃ) এর সাথে মিলিত হয় এবং মাতৃধারার দিক থেকে তিনি হযরত আলী (রাঃ) এর বংশধর।
তাঁর পিতামহ হোসাইন ইবনে আহমেদ নামজাদা সুফী সাধক ও বুজুর্গ ছিলেন।
মধ্য এশিয়া বা পশ্চিম এশিয়া ছাড়াও মাওলানা রুমি এখন বিশ্বজুড়ে বহুল পঠিত এক কবি। পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় ও নামজাদা সাহিত্যিক এলিয়ট, শেক্সপীয়র, ইয়েটস, নেরুদাদের ছাড়িয়ে রুমি প্রণীত বইগুলো সামদৃত হচ্ছে। আমেরিকায় বেশ ক’বারই রুমির বই বেস্ট সেলার মর্যাদা লাভ করেছে।
রুমি তাঁর কবিতায় দর্শন, প্রেম ও প্রার্থনাকে উপজীব্য করেছেন। প্রেম ও প্রার্থনা দেশ কাল জাতি ভেদে কোনো পার্থক্য করে না- তাই রুমি এখন ৭০০ বছর পরেও এতোটা জনপ্রিয়। তিনি কবিতা ছাড়াও বেশ কিছু গদ্যও রচনা করেছেন। তাঁর রচিত গদ্যগুলোও পাঠককে কবিতার মতোই টানে। তাঁর গদ্যগুলোতে তিনি নানা দার্শনিক মতামত তুলে ধরেছেন। যা কবিতার মতোই পাঠকের হৃদয় হরণ করে চলেছে।
রুমি মুসলমানদের কাছে সুফীবাদ বা মরমীবাদের এক পুরোধাব্যক্তিত্ব। তাঁর রচনাবলীতে মানবপ্রেম, স্রষ্টাপ্রেম ও স্রষ্ট্রার সাহচর্য্য লাভের বাণী ফুটে ওঠেছে। মানবআত্মার পরম আকাঙ্খাগুলোই বারেবারে তাঁর কলম থেকে নিঃসৃত হয়েছে।
মাওলানা রুমি রচিত সর্বাধিক সমাদৃত বই হলো মসনবী শরীফ। যা বিশ্বব্যাপী অসংখ্য ভাষায় অনুবাদ হয়ে কোটি কোটি পাঠকের হৃদয় জয় করেছে।
তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো- মসনবী, দেওয়ান-ই-শামস এ তাবরীজী, ফিহি মা ফিহি, দয়িতের কান্না, রুমির গভীর পেমালাপ, রুমির অলৌকিক বাগান ইত্যাদি।
মাওলানা রুমি বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, ফরিদ উদ্দীন আত্তার, বায়েজীদ বোস্তামী, শামসউদ্দীন তাবরেজী এবং শেখ মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবীর মতো বিখ্যাত সুফি বুজুর্গানের মরমী শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। সুফি সাধনার জন্য বিশ্ববাসী তাঁকে হাজার ধরে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। মাওলানা রুমি বর্তমান তুরস্কের কোনিয়া শহরে ১২৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন।
আরও পড়ুন- মির্জা গালিবের শায়েরী