মির্জা গালিবের একগুচ্ছ শায়েরী
মির্জা গালিবের একগুচ্ছ শায়েরী
১.
মনে পড়ে কতোই চাওয়ার
অতৃপ্তি এই বুকে আছে,
খোদা, আমার পাপের হিসাব
চেওনা তাই আমার কাছে।
২.
তিক্ত কথক দুঃখী এমন
তাওতো বলা হয়নি তাকে
কথা কি আর ফোটে তখন
ভাষাই যখন থকমে থাকে।
৩.
খোদা’র একোন কুদরতে সে
আমার ঘরে এসেছে আজ।
বারেক তাকে দেখি আমি
বারেক ঘরের দীনতা সাজ।
৪.
কেই বা জানে থামবে কোথায়
ছুটন্ত এই জীবন ঘোড়া,
না আছে এই হাতে লাগাম
না দু’পায়ে রেকাব্ জোড়া।
৫.
দুঃখমুখী গানের কিছু
মূল্য দিতে শেখো, হে মন,
সত্তা নামের এই বীণাটা
শব্দ হারা হয় যে কখন!
৬.
গালিব, ক্ষমার চোখেই দেখো
তিক্ত গানের এই কালিমা,
আজকে কিছু হৃদয়-বেদন
ছাড়িয়েছে সকল সীমা।
৭.
পাথর তো নয়, হৃদয়ই তো
ভরবে না সে ব্যথায় কেন?
কাঁদবো আমি হাজারো বার
কেউ আমাকে কাঁদায় কেন?
৮.
কূলের মর্যাদা কি টেকে
মত্ত নদী যখন কাতিল?
তুমিই যখন সাকী তখন
আমার সাবধানতা বাতিল।
৯.
এদিকে চাও, একটু তাকাও
অঅয়নাতে কী দেখছো অতো?
তোমায় দেখার জন্যে দেখো
এই দু’চোখের তৃষ্ণা কতো।
১০.
তোমার বিশেষ নিঠুর রুপেই
আসাদ মজে আছে এমন,
নইলে প্রেমের প্রতিশ্রুতি
যতো-ই দাও, ভোলে না মন।
১১. পুরুষঘাতী প্রেম-শরাবের
সঙ্গী হতে আর কে বাকি
আমার মরণ হবার পরে
এমন সুরেই ডাকবে সাকী।
১২.
কেউ কি এমন আছে এখন
গালিব কে যে জানে-ই না?
কবি তো সে ভালোই তবে,
দুর্নামও তার বেশী কি-না।
১৩.
চারিদিকে গরম খবর
গালিব হবে তুলোধোনা,
আমিও তো দেখতে গেলাম
কিন্তু তামাশাই হোলো না।
১৪.
সুর আছো সেই সুরে ভাসো,
শরাবে ও ডুবতে পারো,
রুপের প্রেমে হওনা পাগল
সাধুতা থাক অন্য কারো।
১৫.
ধর্ম-কথা ধার্মিকতা
অনেক আছে তার প্রতিফল
আমারও তা জানাই আছে
মন তবু সে পথে অচল।
১৬.
মদের নেশায় সুখপাওয়া যায়
এমন ভাবে কোন পাগলে?
আমি নেশায় চূর হয়ে রই
নিজেকে-ই ভুলবো বলে।
১৭.
ছুঁয়ে তুমি দেখবে না মদ
করলে, গালিব, শপথ তো এই,
কিন্তু তোমার শপথে যে
কারোই কোনো ভরসা নেই।
১৮.
মদ ছেড়েছি, গালিব, তবে
মাঝে মাঝে ছোঁয়াই ঠোঁঠে
বর্ষাদিনে এবং রাতে
যখন চাঁদের জোৎস্না ফোটে।
১৯.
এই বা কেমন বন্ধু স্বজন
ব্যস্ত যেজন উপদেশে?
আসবে কি কেউ দুঃখ ব্যথায়
আমার সমব্যথীর বেশে।
২০.
দুঃখ আমার প্রাণের ঘাতক
মন কী করে রক্ষা পাবে?
প্রেম যদি বা নাও জ্বালায়
জীবিকাতো ঠিক জ্বালাবে।
আরও পড়ুন- মির্জা গালিবের শায়েরী