পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- নিগার শামীমা

বিধুরবেদনা

সাপের মতো পেচিয়ে রাখা হাত পা মাথা

ঘুম হতে আলাদা সত্ত্বা

পায়ের কাছে মৃত সব আগাছা

ঘুম ঘুম সপ্তাকাশ নীলিমা

স্বপ্ন থেকে তুলে আনা কবিতা

বেদনা বিধুর…

 

কোনো আঘাতই মনে রাখি না আর

ফেনিয়ে ফেনিয়ে বলে দেই সব

যেনো একের পর এক ঢেউ’র তাণ্ডব ;

এখন বেদনা নয়, এখন সুদিনও নয়

হেমন্ত ঝুলে আছে গাছে গাছে

পাতার শরীর জুড়ে জরা

রোদের হৃৎপিণ্ড জুড়ে মৃত মানুষের মায়া

বিষণ্ন দুপুর…

 

কোথাও উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া বাতাস

আচ্ছন্ন করে রাখা দশদিক,

আলো হাওয়ায় ঝুলে থাকা দিনরাত

এখানে আর কষ্ট রাখি না

না কোনো আদিম-মানুষের মনোবেদনা

অবিরাম ঘোর…

 

আচ্ছন্ন হাওয়া,কাশের বৃন্দাবন, হেমন্তের চৈতন্য

ঘরে ফেরা অবচেতন মন

ঝরে পড়া অনাগত সুদিন ; দূরে বিষণ্ন দিন…

 

বিরহ রোদন

মেঘের আকারে বৃষ্টি তোমার

বিস্তৃত উপমায় সহস্র ঢেউ

উপকূল সমুদ্দুর উঁচিয়ে আছে

তীরে তার আর নাই কেউ ।

 

দাঁড়িয়ে কাশফুল রোদ্দুরের

শেষে বনে শরতের বৃষ্টি

কানামাছি এগোয় কাছাকাছি

কোথাও হচ্ছে অনাসৃষ্টি ।

 

হলুদবনের ধারে রোদ্দুর হাসে

চিকচিক করে বালি-কাদা

শঙ্খচিল শালিক উড়ে বেড়ায়

বালিহাঁস সাঁতারে শাদা।

 

রাখাল রাজাটা এসেছে ফিরে

এবার বাঘ বাঘ চিৎকার

শোনা যায় মেঘমল্লার বিদ্যুতের

ঘনঘটায় দূরের শীৎকার।

 

আকাশ ভাসছে ছাতি ফাঁটছে

রৌদ্রছায়া মেঘ করে খেলা

শরৎ জমিন ছুঁয়ে আছে নীলিমা

বেলা পড়ে আছে অবেলা ।

 

কাঁপছে বাতাস উঁচুনিচু সমতল

ফিরে এসেছে দখিন হাওয়া

দিগন্ত ছোঁয়ে আকাশটা দাঁড়িয়ে

মাঝির দূরের নৌকা বাওয়া।

 

কংক্রিট নগর ভরা উঁচুনিচু ভবন

ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে মনুষ্য জীবন

ভুল করে ভুল পথে চলেই এসেছি

ঠিকানাহীন আমরা ভীষণ।

 

গোলকার পৃথিবী,মার্বেল পাথরে

ছেয়ে গেছে যখন এ মন

হামাগুড়ি দিয়ে ভাবনারা আমার

দেখে যায় ব্যথার ভুবন।

 

পাথরের প্রতিমা লৌহমানবী

চির না-ধরুক কখনো মনে/

চারদেয়াল জুড়ে ঘর এঁকে রেখেছো

ঘরের বিরহে ঘরের রোদনে।

 

বিবাদে বিষাদে

বয়সের সমান বড় হইনি কোনোদিনও আমি

সবকিছুর ভিড়ে কেবল নিজ নাম ভুলে গেছি

তোতা পাখি ঠোঁট নড়াচড়া ভুলে গেলে  ভাবি

পৃথিবীর বয়স বেড়েছে, কেউ নাম ভুলে গেছে

আমাকেও ভুলে গেছে  পুরাতন পথের  মতো

হস্তরেখা জমিয়ে হাতের মুঠো ভরে প্রেম রাখি

অনেক জীবনের পরের স্টেশনে নেমে দেখি

কুয়াশা শিশিরে ভিজে গেছে শহরের শেষ বেঞ্চি

জোনাকি রাতের তীরে প্লাটফর্ম জেগে একাকী

শেষরাতের ট্রেনে চড়ে কেউ ফিরবে বলে বাড়ি

রাত ভর জ্বলেপোড়ে হারিকেনের টিমটিমে বাতি

চোখ জুড়ে নেমে আসে নদী, ছায়ার লুকোচুরি

জ্যোৎস্নার ঢেউ খেলানো চাঁদ, বিবাগী মন যেন

গভীর বেদনায় ঘুম ভেঙে যাওয়া একলা রাতের

তপ্তরৌদ্র দিনের পরে সোনা ঝরা মাঠের শেষে

কাশফুল উঁকি দিলে বুঝি তোমার দু’চোখ বেয়ে

মেঘ নেমে আসে শরতের নীল ছুঁয়ে, এ-বিষাদে

 

বেদনা

স্বপ্নগুলো এমনই

অচেনা পাখিদের মুখ দেখে হাসে

বিষাদে পা ডুবিয়ে ভাসে

স্বপ্নগুলো এমনই কড়া রোদে পোড়ে,

 

অথচ একদিন বুনেছিলাম

ডালিমের লাল দানার মতো টকটকে বেদনা…

 

ফুলপত্র

কাঠ-গোলাপের বারান্দায়  ঝুলে থাকে সুপ্রিয় পাখিটি

কখনও কাগজে আঁকা গোলাপটি উড়ে যায়, দু’ চারটি

ছিঁড়ে যাওয়া পাপড়ি জুড়ে জড়িয়ে থাকে লাল পিঁপড়া,

পিঁপড়েদের তীক্ষ্ণ কামড়ে লেপ্টে থাকে  অযাচিত মায়া

গল্প পাঠের আসর ছেড়ে উড়ে যায়, না-ফোটা ফুলেরা

ঘ্রাণের তীব্রতা ভেদ করে চোখে ছড়িয়ে পড়ে নয়নতারা

সাদা শেফালির বুকে টকটকে রক্ত,লেগে থাকা ব্যথারা

 

এক আঁজলা জীবন আমার

গভীর জল থেকে হঠাৎ তুলে আনা মাছের মতো

তলিয়ে যাবার পরও নিশ্চিত আবিষ্কার করেছি যে

আমি তো ঢের-বাঁচা বেঁচে আছি। জীবিত আছি!

নিঃশ্বাসের তীব্রতা পারদের ঘনত্বে উঠছে নামছে

জলের সাথে সখ্য আমার বড় আদিম এবং বুনো

 

সহসা এক বনফুলই আমি

শহরের অলক্ষ্যে ফুটে আছি।

 

আরও পড়ুন- জামিল হাদীর কবিতা

জয়েন করুন- পরমপাঠ সাহিত্য ফোরাম