রক্তমাখা চরণতলে- পলাশ মজুমদার- গল্প
বাবা, আমাকে একবার টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যেতে পারবি? অশীতিপর বৃদ্ধ পিতার প্রশ্ন চুয়াল্লিশ বছরের ছেলে আমিরের কাছে।
তোমার তো হাঁটাচলা করতেই কষ্ট; তবু কেন সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা? বিস্মিত আমির জানতে চায়।
ছেলের প্রশ্নে বাবা লজ্জা পান। জড়সড় হয়ে যান দ্বিধায়, যেন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন গৃহস্থের হাতে। অশ্রু চিকচিক করছে বলে তৎক্ষণাৎ বন্ধ করে ফেলেন চোখ, যাতে ছেলে টের না পায়। আমির তা বুঝতে পারলেও না বোঝার ভান করে।
বাবার সংকোচের যথেষ্ট কারণ আছে। ছেলের সঙ্গে তিনি মন খুলে কথা বলেননি কখনো। বাবা-ছেলের মধ্যে দূরত্ব বরাবরই ছিল। সেই দূরত্ব বাবাই তৈরি করেছিলেন। বাবার ধারণা ছিল, ছেলেকে প্রশ্রয় দিলে মাথায় চড়ে বসতে পারে; তখন ঠিকমতো শাসন করা যাবে না। সে বিবেচনায় বরাবরই নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন আবেগ। প্রকাশ করেননি স্নেহবাৎসল্য।
ছোটবেলায় ছেলের যত আবদার ছিল, সব মায়ের কাছে। বাবাকে কিছু জানাতে হলে মধ্যস্থতা করতে হতো মাকে। বাবার কাছে ছেলে খুব একটা যেত না; বরং দূরে দূরে থাকত। ভয় আচ্ছন্ন রাখত ছেলেকে; অথচ কখনো একটা ধমক পর্যন্ত দেননি বাবা। কিছু না বলাটা সম্পর্কের মধ্যে তৈরি করেছিল অস্বস্তির দেয়াল। বলা যায় একধরনের শীতলতা।
বাবার মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে ছেলের তেমন ধারণা ছিল না; কেবল একটি বিষয় ছাড়া। বাবা একজন মানুষকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন, যেখানে প্রতিদানের সামান্যতম আশা নেই। সব মিলিয়ে আমিরের কাছে বাবা এক রহস্যময় চরিত্র। সেই রহস্য ভেদ করতে কখনো চায়নি আমির।
বাবা যে বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ভক্ত, তা আমির জানত। বাবার ঘরে বঙ্গবন্ধুর একটি বিশাল ছবি সব সময় দেখে আসছে সে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাবার ঝগড়াও হতো কখনোসখনো। এমনকি এই বিষয়ে মন-কষাকষিও হয়েছে কয়েকজনের সঙ্গে।
আমির বুঝতে পারত না বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাবার অবিচল প্রেমের কারণ। এদিকে আমিরের অবস্থান বাবার একেবারে বিপরীত মেরুতে। তার ছোটবেলা কেটেছে এমন এক পরিমণ্ডলে, যেখানে বঙ্গবন্ধুকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হতো। তার মনে গেঁথে গিয়েছিল এমন কিছু ধারণা, যা স্বাভাবিক যুক্তিবোধসম্পন্ন মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য; কিন্তু জীবনের অন্তিম মুহূর্তে সে আর কোনো বিরোধিতার কথা বলে আঘাত দিতে চায় না বাবার মনে।
বাবার দৃষ্টির সামনে আমির অসহায় বোধ করে। সে টের পায়, একসময়ে দাপটের সঙ্গে চলা সাহসী মানুষটি আজ দুর্বল; শক্তি হারিয়ে নিঃশেষ। তবু কোথায় যেন বাবার প্রাণটুকু আটকে আছে। এখন চলছে কেবল দিন গোনা। যেকোনো দিন বেজে উঠবে জীবনের শেষ ঘণ্টা।
বাবার কাছে প্রশ্নের কোনো উত্তর না পেয়ে আমির অবশেষে বলল, বাবা, তুমি যেখানে যেতে চাও, সেখানে নিয়ে যাব। কবে যেতে চাও বলো?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাবা বললেন, তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয়। মনে হয় আর বেশি দিন আমি নেই। তোর মা যে ওখানে একা। আমাকে ছাড়া থাকতে তার কষ্ট হচ্ছে। আমি না গেলে সে শান্তি পাবে না।
ছেলের অন্তরাত্মাকে স্পর্শ করে বাবার কথাগুলো। রোধ হয়ে আসতে চায় কণ্ঠ। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। কথা সরতে চায় না মুখ দিয়ে। নিজেকে সংযত রেখে আমির জানতে চায়, আগামী শুক্রবার রওনা হলে কেমন হয়?
তোর যখন সময় হবে, তখন নিয়ে যাবি। তবে তোকে ছাড়া আমি যাব না। বাবা বললেন।
বাবার আবদারের কাছে নত হয় আমির।
বাবার কোনো ইচ্ছাই সে কোনো দিন পূরণ করতে পারেনি। তিনি যা করাতে চেয়েছিলেন, আমির তার কিছুই করেনি। বাবা চেয়েছিলেন ছেলে বিজ্ঞান পড়ুক, ডাক্তার হোক, অথচ ছেলে পড়ল ব্যবসায় নিয়ে। সে সব সময় চলেছে নিজের মতো। এমনকি বিয়েও করেছে নিজের পছন্দে।
বাবার দিকে আমির ন্যূনতম খেয়াল পর্যন্ত করেনি। তার প্রয়োজনও পড়েনি। বাবা বরাবরই স্বনির্ভর। আর যেটুকু সহযোগিতা লাগত, তা মা-ই পূরণ করে দিতেন। মা মারা যাওয়ার আগে বারবার আমিরকে বলেছিলেন, তোর বাবার দিকে খেয়াল রাখিস। আমাকে ছাড়া তার এক দিনও চলে না।
মাকে দেওয়া কথা রাখতেই আমির শেষ দিকে বাবার প্রতি সদয় হয়েছে, তা বলতে হবে। মাকে কথা না দিলে হয়তো আজও সে বাবার প্রতি উদাসীন থাকত।
মায়ের মৃত্যুর পর নানা রোগে বাবার শরীর ভেঙে পড়লেও মন ভাঙেনি। মনের জোরে তিনি টিকে ছিলেন এতগুলো বছর। একা একা বাজারে যান। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যান। পথে-ঘাটে মানুষকে ধরে ধরে গল্প করেন। সেই সব গল্পের বেশির ভাগ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে। তিনি কোথায় কীভাবে যুদ্ধ করেছেন। কেন সেদিন বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঝাঁপ দিয়ে যুদ্ধ-ময়দানে ছুটে যান। যুদ্ধ কেন অপরিহার্য ছিল। দেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর কী ভূমিকা ছিল—এসব।
কেউ কেউ বাবার গল্পে বিরক্ত হন; তবু তিনি থামেন না। উৎসাহী অনেকে আবার নিজেদের থেকে তার কাছে গল্প শুনতে চান; তখন তিনি যেন আনন্দের পাখা মেলে দেন।
বাবা নিজের কাজ নিজেই করতেন; এমনকি কাপড় কাচার কাজটুকুও। কেবল হাঁপানির টানটা বেড়ে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন; তখন দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যায়। মনে হয়, এই বুঝি প্রাণ-পাখিটি বেরিয়ে গেল। কয়েক দিন ভুগে আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন। এভাবে চলছে বেশ কিছুদিন ধরে।
বাবা, পৃথিবীতে এত জায়গা থাকতে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার ব্যাপারে তোমার এত আগ্রহের কারণ কী? আমির নরম গলায় বাবার কাছে জানতে চায়।
অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল, একদিন জাতির জনকের সমাধি দেখতে যাব। তাঁর কবর জিয়ারত করব। কিন্তু আর্থিক টানাটানির কারণে সম্ভব হয়নি। স্কুলে মাস্টারি করে আর কত বেতন পেতাম; সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হতো। তোর মাকে একবার কথা প্রসঙ্গে এই ইচ্ছার কথা বলেছিলাম। হঠাৎ একদিন কিছু টাকা দিয়ে আমাকে বলল, যাও, তোমার ইচ্ছাটা পূরণ করো। সে-ও কত দিন আগের কথা। নিশ্চয়ই খরচের টাকা বাঁচিয়ে সে অল্প অল্প করে তা জমিয়েছিল।
তো যাওনি কেন তখন? কোনো সমস্যা হয়েছিল কি? আমিরের কণ্ঠে ঝরে পড়ে বিস্ময়।
উপায় ছিল না। হঠাৎ তোর বড় ভাইটা কঠিন অসুখে পড়ল। হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করেও শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারলাম না। ওর পেছনেই টাকাটা ঢেলেছিলাম।
এটা কবেকার ঘটনা, বাবা?
১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা। কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু সপরিবার নিহত হলেন। হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। যে মানুষটি দেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন, তাঁকেই মেরে ফেলল ঘাতকরা। তোর সোনা মামা তো বছরখানেক উদ্্ভ্রান্তের মতো ঘুরে আত্মহত্যাই করে বসল। আমি যে কীভাবে নিজেকে সংযত রেখেছিলাম, জানি না। আমার মধ্যেও তখন এমন চিন্তা খেলা করেছিল।
সোনা মামার আত্মহত্যার গল্পটি ছোটবেলায় অনেকবার শুনেছে আমির। মামার কথা বলে প্রায়ই কাঁদতেন নানি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তার নানার মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দিয়েছিল। আমিরের মা আর খালারা মাঝে মাঝে তার গল্প বলে অঝোরে কাঁদতেন। সোনা মামার গল্প মা প্রায়ই করতেন। এমনকি সে শুনতে না চাইলেও। সোনা মামা ছিলেন তার মায়ের যমজ ভাই। দুই ভাইবোনের চেহারা ছিল প্রায় এক রকম। মায়ের কাছে থাকা একটা ফটোগ্রাফ তার প্রমাণ।
সোনা মামা যেদিন রশি পেঁচিয়ে গাছের ডালে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিলেন, সেদিনও ছিল ১৫ আগস্ট; তবে তা ১৯৭৬ সালে। সোনা মামার মৃত্যু নিয়ে অনেক কথা মানুষের কাছে শুনত আমির; কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো। কারণ চেনাজানা মহলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আহ্লাদ বা ভালোবাসা আমির কখনো দেখেনি; বরং দেখেছে উল্টোটা।
পিতৃ ও মাতৃকুলে স্বাধীনতাবিরোধীদের ভূমিকা আমির বরাবরই দেখে এসেছে। প্রায়ই শুনতে হতো, দেশ স্বাধীন না হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে থাকলে ভালো হতো। ভারতের স্বার্থে ও ভারতের প্ররোচনায় অযথা গন্ডগোল বাধালেন শেখ মুজিবুর রহমান। ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি কাটাকাটি হয়, আবার মিলেও যায়। এমন নানা রকম বিদ্বেষপ্রসূত কথাবার্তা শুনতে শুনতে বড় হয়েছে আমির।
সেখানে জিয়াউর রহমানকে বলা হতো হিরো; সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। দেশ স্বাধীন হয়েছে জিয়ার কারণে। দেশ গড়েছেনও জিয়া। বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য কিছুই করেননি; শুধু নাটক করতেন। জানতেন ভালো অভিনয়। ইচ্ছা করে যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। দেশের জন্য তাঁর কোনো মমতা ছিল না। দেশের মানুষের দুর্দশার জন্য বঙ্গবন্ধু দায়ী। দেশ পরিণত হয়েছে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে।
সোনা মামা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তাঁকে খেতাব দিতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার; কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পর্যন্ত নিতে চাননি।
সোনা মামা বলতেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বা সার্টিফিকেট লাগে না। আমি ও আমার বন্ধু রতন সাহা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে স্বদেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলাম। যুদ্ধ থেকে না-ও ফিরতে পারতাম। তাই এই ত্যাগের বিনিময়ে কিছু চাই না।
গ্রামের সবাই বলত, সোনা মামা আর রতন সাহা ছিলেন হরিহর আত্মা। একজনকে ছাড়া আরেকজনের একটি দিনও চলত না। তাঁর মৃত্যুর পর রতন সাহা দেশ ছেড়ে ত্রিপুরায় পাড়ি দিয়েছিলেন। রতন সাহার দেশত্যাগের বিষয়টি আজও সবার কাছে রহস্যময়। শুনেছি, তিনি সংসার করেননি।
সোনা মামাকে আমির দেখেনি; তার জন্মের বছর চারেক আগে সোনা মামার জীবনাবসান হয়। কেবল তাঁর গল্প শুনেছে সে। গল্প শুনতে শুনতে সোনা মামার প্রতি আমিরের শ্রদ্ধা বাড়ে।
সোনা মামা ছিলেন ইতিহাসের ছাত্র। স্বেচ্ছায় ইতিহাস নিয়ে পড়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের গণযুদ্ধের ইতিহাস তাঁর মনের মধ্যে গেঁথে দিয়েছিল স্বাধীনতার বীজমন্ত্র; জড়িয়ে ছিলেন ছাত্ররাজনীতিসহ ওই সময়ের সব আন্দোলনের সঙ্গে। তিনি আর দশজন ছেলের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করেননি। তাঁর রক্তে মিশেছিল বিপ্লবের নেশা। স্কুলজীবন থেকে তিনি ও রতন সাহা বামপন্থী রাজনীতি করতেন; তাঁদের আদর্শ ছিল চেগুয়েভারা। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্ত হন আওয়ামী রাজনীতিতে।
আমির তার চট্টগ্রামের বাসা থেকে শুক্রবার সকালে প্রাইভেট কার ভাড়া করে বাবাকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হয়। সঙ্গে তার বন্ধু মোহন।
দেশের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ঢাকা হয়ে মাওয়া ফেরিঘাট পার হতে হবে। বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পাওয়া যায়, পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে গত রাত থেকে ফেরিসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ। মাওয়া ঘাটে এসে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়। অগত্যা গাড়ি ঘোরাতে হয় মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া অভিমুখে। এদিকে তীব্র যানজট। সারি সারি গাড়ির লাইন। জট লেগে আছে উথলি পর্যন্ত।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। তুমুল বৃষ্টির কারণে চারদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। আবহাওয়া অফিস ঘোষণা করেছে সাত নম্বর বিপদ সংকেত। অন্ধকারে ছেয়ে আছে চারদিক। গাড়ি কোনোভাবেই এগোতে পারছে না। চলছে কচ্ছপ গতিতে। প্রায় আট ঘণ্টা অপেক্ষার পর গাড়ি ফেরিতে ওঠে মাঝরাতে। উত্তাল নদীতে ফেরি কেঁপে কেঁপে উঠে; ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা জাগে। কে যেন বলল, নদীতে একটি লঞ্চ ডুবেছে গত সন্ধ্যায়।
এদিকে বসে থাকতে থাকতে সবার পিঠে ব্যথা হয়ে গেছে। বাবার যে কষ্ট হচ্ছে, তা বুঝতে পারে আমির। তবে বাবা মুখে কিছু বলছে না। সে বারবার বাবার অবস্থা জানতে চায়। বাবা আশ্বস্ত করে বলেন, আমি ঠিক আছি। তুই চিন্তা করিস না। টুঙ্গিপাড়া পৌঁছাতে আর কতক্ষণ লাগতে পারে?
আমির কোনো উত্তর দেয় না।
মাঝনদীতে হঠাৎ বাবার শ্বাসকষ্ট বাড়ে। টানের চোটে দমবন্ধ হয়ে আসতে চায়। দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি ভিড়তেই আমির বাবাকে বার কয়েক ডাকে। কোনো সাড়াশব্দ নেই। নিস্তব্ধ। আমির ভাবে, বাবা বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। ইচ্ছে করে আর ডাকে না সে।
টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছাতে সকাল সাতটা বেজে যায়। গাড়ি থামে একটি ছোট রেস্টুরেন্টের সামনে। এবার আমির ডাকে, বাবা, ওঠো, আমরা এসে গেছি।
বাবা কোনো উত্তর করে না। তবু আমির ডাকতে থাকে।
এত ডাকাডাকির পরও সাড়া না দেওয়ায় আমির বিরক্ত হয়। মোহন আমিরকে বলল, মুখের কাছে হাত নিয়ে দেখ শ্বাস পড়ছে কি না!
আরো পড়ুন- পলাশ মজুমদারের গল্প- শূন্যতার গোলকধাঁধা