চার্লস বুকোস্কির কবিতা- অনুবাদ- টিটো মোস্তাফিজ
অসম্ভাব্যতা
ভ্যানগগ ছবির জন্য তার ভাইকে লিখতো
হেমিংওয়ে বন্দুক পরীক্ষা করে দেখতো
সেলিন একজন ডাক্তার হিসেবে ভেঙে পড়েছে
মানুষ হবার পথে অসম্ভাব্যতা…
ভিলনকে চোর বলে প্যারিস থেকে তাড়ানো হয়
ফকনার মাতাল হয়ে তার শহরের নর্দমায় পড়ে থাকতো
মানুষ হবার পথে অসম্ভাব্যতা…
বারুজ তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করে
মেইলার তার ইয়েকে চাকু মারে
মানুষ হবার পথে অসম্ভাব্যতা…
মোঁপাসা এক ডিঙি নৌকায় পাগল হয়ে
পেছনের প্রোপেলারের মধ্যে পড়েছিল
দস্তয়েভস্কিকে গুলি করার জন্য
দেয়ালের সামনে সারিতে দাঁড় করানো হয়ে ছিল
অসম্ভাব্যতা…
সিলভিয়া ওভেনের মধ্যে মাথা ঢোকায় আলু পোড়ার মতো
হ্যারিক্রস বিকাল সূর্যতে ঝাঁপ দেয়
লোরকাকে স্পেনের সৈন্যরা রাস্তায় গুলি করে হত্যা করে
অসম্ভাব্যতা…
পাগলা গারদের বেঞ্চে বসে আর্টাউড
চ্যাটারটন ইঁদুর মারা বিষ পান করে
শেক্সপীয়ার একজন লেখা চোর
বিথোভেন এর মাথায় শিং ঢুকে ছিল
তার বধিরতার বিপরীতে
অসম্ভাব্যতা হায় অসম্ভাব্যতা!
নিটসে হয়ে গেছিল পুরোপাগল
মানুষ হওয়ার অসম্ভাব্যতা
সবাই খুব বেশিই মানুষ
এই শ্বাসপ্রশ্বাস
বাতাস টেনে নেয়া আর ছাড়া
ছাড়া আবার টেনে নেয়া
এই আবর্জনা গুলো
এই কাপুরুষের দল
এই বিজয়ী গণ
এইযশেরপাগলাকুত্তা
আমাদের দিকে এই সামান্য আলো সরানো
অসম্ভব।
Beasts Bounding Through Time by Charles Bukowski
চল্লিশ সহস্র
আজ ট্র্যাকে, বাবা দিবসে,
যারা টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছে
প্রত্যেকের জন্য ছিল ওয়ালেট
আর ছিল ছোট্ট সারপ্রাইজ।
বেশির ভাগ লোকের বয়স
৩০থেকে৩৫আর মোটা হয়ে যাচ্ছে
তাদের অনেক হাফপ্যান্ট পরে হাঁটছে
তারা বাসি হয়ে গেছে, চ্যাপ্টা হয়েছে
বাস্তবে, বাদ দাও,
তাদের নিয়ে লেখাই ঠিক না
আমি লেখছি কেন?
এদের মৃত্যুশয্যাও পাওনা নয়
এই ছোট্ট চলমান তিমির দল
তারা অনেকেই পেসাবখানায়
কিংবা খাবারের লাইনে
কোন মতে বেঁচে যায়।
কিন্তু যখন তুমি তাদের অনেককে দেখ
ওখানে কিংবা ওখানে নয়,
শ্বাস নিচ্ছে, পাদ মারছে
মন্তব্য করছে,
একটি বজ্রপাতের অপেক্ষায়
যা আসবেই না।
অপেক্ষায় গর্বের ছুটন্ত ঘোড়ার
অপেক্ষায় সুন্দরী রমনীর যে সেখানে নেই
অপেক্ষায় বিজয়ের
অপেক্ষায় সেই মহান স্বপ্ন বাস্তবায়নের
কিন্তু তারা কিছুই করবে না।
তারা ভারী পায়ে হাঁটবে
হটডগে কামড় বসাতে থাকবে
কুকুরেরই মত
মাংস দেখে ঢোক গিলবে
তারা পরাজয় নিয়ে অভিযোগ করবে
তারা জকিদের দোষাবে
সবুজ বিয়ার পান করবে
পার্কিংলটে তাদের বিল শোধনা করা
গাড়ীতে জ্যাম লেগে আছে
জকিরা পরের রেসের
জন্য চড়ে বসে
লোকে বাজিধরার জানালায় ছোটে
মন্ত্রমুগ্ধের মতো।
পিতা এবং অ-পিতারা
সোমবার তাদের অপেক্ষায়
এটা তাদের শেষ বড় সুযোগ
আর ঘোড়াগুলো খুব সুন্দর
ঐসময়, ঐস্থানে
তাদের সুন্দর দেখে কষ্ট লাগে।
যদিও তাদের জীবন ঝলমল করে
অলৌকিক ঘটনা ঘটে এমন কি নরকে।
ভাবছি আরেকটি রেস দেখেই যাই।
দুটো মাছি
মাছিরা জীবনের রাগী টুকরো
তারা এত রাগী কেন?
মনে হয় তারা আরও কিছু চায়
মনে হয় তারা মাছি বলেই রাগী
এটা তো আমার দোষ না।
আমি রুমে তাদের সাথে বসি
তারা প্রবলদ্বন্দসহ বিদ্রুপ করে
যেন তারা ছিন্ন আত্মার টুকরো
কোন জায়গা থেকে ত্যাগ করা।
আমি খবরের কাগজ পড়তে চেষ্টা করি
কিন্তু তারা আমাকে পড়তে দেবেনা
একটা অর্ধবৃত্তাকার পথে যাবে
দেয়াল বরাবর ছাদের দিকে
আমার মাথার দিকে ছুঁড়ে দেয়
বিচ্ছিরি ভনভন শব্দ।
আরেকটা, যেটা আকারে ছোট
কাছে থাকে আর আমার হাতটাকে জ্বালায়
কিছুই বলে না, উপরে ওঠে,
হামাগুড়ি দিয়ে নেমে আসে
কোন দেবতা এই দুটো হারানো বস্তু
আমার উপর রেখে দিয়েছে?
অন্যলোক ভুগেরাজ্য পাটের কঠোরতা,
প্রেম হারানো…
আমার কষ্ট পোকামাকড়।
ছোটটার দিকে হাত নাড়ি
যেটা মনে হল তার প্রতিবাদ করার
শক্তিতে বলীয়ান হয়ে জেগে উঠেছে
সে দ্রুত বৃত্তাকারে ওড়ে, কাছেই
এমনকি সে ভনভনায়।
আর যেটা উপরে ছিল
নতুন ঘূর্ণি টের পায়
উত্তেজনায় সে তার গতি বাড়ায়
হঠাৎ করে নেমে আসে
আওয়াজের চপেটাঘাতে
আর অন্যটার সাথে যোগ দেয়
আমার হাতের চারদিকে ঘুরতে থাকে
ল্যাম্প শেডের গোড়ায়
এলোপাথাড়ি শব্দ করে
যতক্ষণ না আমি এই অরাজকতা
থামাতে কিছু করি, আঘাত করি
রোল করা কাগজ দিয়ে, লাগে না
আবার মারি আবার মারি
তারা বিচ্ছিন্ন হয়, তাদের মাঝে
কিছু বার্তা হারিয়ে গেছে।
আমি বড়টাকে খুঁজে পাই
রাগী বেশ্যার মত
নিজের পাছায় লাথিমারছে সে।
আমি এ গোলাম পেপারের ঢাল হাতে
আর সে মাছির কুশ্রী তা দেখাতে লাগলো
ছোটটা এখন বড় বৃত্তাকারে উড়ছে
শান্ত, দ্রুত আর প্রায় অদৃশ্য
সে আমার হাতের কাছে আসছে না
পোষা হয়ে গেল না কি বেটা?
ও নিজের মত থাকুক এখন
আমিও আমার মত থাকি,
পেপারটা অবশ্য নষ্ট হয়ে গেছে।
কিছু একটা ঘটেছে আজ
কিছু একটা আমার দিন নোংরা করলো
কোন সময় লোক বা মেয়ে মানুষ লাগে
এমন নয় ব্যাপারটা,
কেবল জীবন্ত কিছু হলেই চলে।
আমি বসে থেকে ছোটটাকে
আমরা এক ধরনের বন্ধনে জড়িয়ে আছি
বাতাসের মধ্যে এবং জীবন্তের রাজ্যে।
আমাদের দুইজনের জন্যই দেরি হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন- চার্লস বুকোস্কির কবিতা