পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- রিক্তা রিচি

জলজ্যান্ত প্রাণ ও প্রত্যাশা

একটা জলজ্যান্ত প্রাণ বয়ে বেড়াচ্ছি

খুব নিশীথে সে জানান দেয় তার উচ্ছ্বাস,

ভালো লাগার ব্যাকরণে সামান্য ছেদ পড়তেই

সে জানায় ওটা তার পছন্দ নয়, সে অন্যটা চায়।

 

একটা শান্ত নদী। সেখানে মৃদুমন্দ ঝড়।

ঝড়ের নৌকা টালমাটাল

জলে ভাসতে ভাসতে কোথাও কূল পায় লাল রক্তজবা কিংবা হলুদ অলকানন্দা।

হয়তো সে ঠিক এমনই।

তীরের অপেক্ষায় দিন গুণছে

থরে থরে সাজাচ্ছে কিছু স্বপ্নভ্রুণ।

 

এক বসন্তের দিন

হলুদ-কমলা গাঁদা যখন ছেয়ে যাবে চারদিক

হয়তো তখন তার প্রাণেও বাজবে মনজুড়ানো গান।

পৃথিবীর উৎসবে হাজির হবে ঝিকিমিকি রোদের পাশে বাঁশঝাড়ের ছায়া হয়ে।

চাঁদের কণায় যত আলো, যত রূপালি মাংস আছে,

সব তুলে এনে হাজির করবে তুমি ও তোমাদের জন্য।

 

পৃথিবীতে আসবে এক নতুন প্রাণ

ফল ও ফসলের ক্ষেত—দ্রুত তৈরি হও

হাওয়া—আরও বিশুদ্ধ হও

শহর—আরও পরিচ্ছন্ন হও

নদী—আরও যৌবনা হও

 

আমার সন্তান যে পথে হাঁটবে, সে পথ আরও আরও মায়াবতী হোক।

 

পৃথিবী লিখে রাখুক মায়ের আয়ু

মায়ের সাদা চুল

আলতো আঘাতে বুকে মোচড় দেওয়ার অনুভূতি জাগায়।

পৌষের কুয়াশা ঝরা সকাল শেষে দুধ- কুসুম রোদ লুকোচুরি করে আর বলে

তাঁর বয়স বাড়ছে। এক পা, দুই পা করে আগাচ্ছে কোনো এক অনির্দিষ্ট ঠিকানার দিকে।

 

ভয়ের শকুনেরা আমায় জাপটে ধরে

শতাব্দীর সব ভার কাঁধে ভর করে

মনে হয় তাঁর আঁচল জুড়ে গিট বেঁধে থাকি, যেমন চাবিরা থাকে।

 

দিনের নামতাঘরে সরলরেখা আঁকতে আকতে রোজ কাটাকুটি খেলা খেলি।

পৃথিবীর কত্ত কত্ত হিসেব, অথচ সেসব দর কষাকষি, মাপজোখ ভালো লাগে না।

আমি কেবল পৃথিবীর পথে পথে লিখে যেতে চাই মায়ের আয়ু।

 

আমার মা- খুব সরল, ভীষণ সাধারণ

তার চোখ যেন নান্দনিক সরলকাব্য।

কাঁথার ফোড়ে ফোড়ে যে মমতা তিনি লিখে রাখেন

সেভাবে পৃথিবী লিখে রাখুক তাঁকে।

 

সবার বয়স বাড়ুক

দিন গিয়ে মিলুক সন্ধ্যার কোলে

বয়সী বট অপরাহ্নে নুয়ে পড়ুক অজানায়

কেবল মায়েদের বয়স না বাড়ুক। না বাড়ুক।

 

আরও পড়ুন- সুমি কায়সারের কবিতা

ফেসবুকে ফলো করুন- পরমপাঠ