পদাবলিপ্রচ্ছদ

রহিত ঘোষালের কবিতা

হাতঘড়ি

এই রাত থামলো এসে হাতঘড়ির কাছে,
জনমানব নেই একটাও আর এই রেলস্টেশনে,
রেলিঙে খারাপ মেয়েদের স্পর্শ,
এবড়োখেবড়ো আকাশ, জেলাশহর,
সব সময়ের মতোই আমি অতিথি,
এসে তদারকি করি, চলে যাই,
সভ্যতার বুকে এখন আর কোনও আলো নেই,
ফস্কে গিয়েছে মাঘী বিভ্রম,
গুলঞ্চলতার মতো প্রতীক্ষা-
হন্যে হতে থাকে ইলেকট্রিক চুল্লি,
নিকোটিনের চাঁদ ডানাভাঙা শতাব্দীকালের
দিকে মৌতাত এনে রাখে,
রিফিউজি কলোনি রক্তবীজের মতো
প্রতিশোধ নিতে নিতে ঠোক্কর খায়,
জমাট বাঁধে ভ্যাপসা মর্গের পিপীলিকা
নোংরা নাচঘরে

 

রংবেরঙের বিদ্যুৎচ্ছটা

যখন আমার ছোঁয়াতে বিসর্জন গেছিল
কালরাত্রির পলাশফুল
নরহত্যার অপবাদ
তৎক্ষণাৎ কেউ কিছু বোঝেনি
বুঝেছে যখন তখন কাকতাড়ুয়া
আর্তনাদ করে উঠেছে নক্ষত্রের মাঠ থেকে
রোগা রোগা সব ধূসর রঙের লাশ
হাত বাড়িয়েছে মাটির তলা থেকে
জিজ্ঞেস করেছে জন্মদিনের ধ্বনি
তাদের শান্তশিষ্ট সন্তানের নাম
তাদের পোড়ামুখী মা-বউয়ের কথা
তখনই একটা আগ্নেয়গিরি
বহুযুগের ঘুম ভেঙে উঠে
সমুদ্রের তলায় যে সোনার দেশ
তার কাছে উর্বরতা নিয়ে হাজির হয়েছে
সমস্ত সৎ মাছ সেই অজস্র
রংবেরঙের বিদ্যুৎচ্ছটার উপর আধশোয়া হয়ে
উদ্ভিদের তীর্থংকরের মুখের দিকে চেয়ে আছে
নাম কীরে তোর মা
এই কুয়াশার নাম কী
ওই বালিকার
কী নাম
স্বর্গের চড়ুই দ্যাখে মেয়েটা
এই কাশফুলের সময়
পল্লিগ্রাম দেবদ্বিজের দয়া মেখে
সর্বনাশী ভাঙন দ্যাখে
ওলটপালট কোমরজলে- ভীষণ তেষ্টাজলে
ধ্যাবড়ানো সিঁদুর
প্রতিমা ভেসে ওঠে

 

দুঃসহ

পদ্মফুল একদিন মানুষের মতো সক্রিয় হবে
তখন আমরা সবাই ন্যাজেগোবরে হবো
আমাদের পায়জামায় একগুচ্ছের কাদা লাগবে
তেঁতুলজল খাবো আমরা বর্ষা শুরু যেখানে
বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে আসবে
আদিগন্ত আমাদের মাথার উপর ছাতা থাকবে
তোমার নরম শাড়ি মনভরা
আমি তো কাঙাল তোমার আলিঙ্গনের জন্য
ডেঁপো মেয়েটার হুজুগে নিত্য নৈমিত্তিক-
তাই ভয়াবহ জ্বর
আমি পথের এ মাথা ও মাথা দুঃসহ করে ফেলি

 

হিড়িক

আস্থা কেঁপে উঠেছে
নিঃসঙ্গ আকাশকুসুম
কপালের টিপের মতো মেঘ
পূর্ণচন্দ্র যানজট
ছোটখাটো এক একটা দিন
সহ্য করে নেওয়া
তবু বিষাদের রঙ সূর্যমুখী
রিকশায় করে তুমি মিলিয়ে যাও
বাঁশের তেমালের উপর খেলা করে পোকা
তোমার দুরন্তপনায় হাত ধুয়ে ফেলি
অবচেতন প্রার্থনার মধ্যে ডুবে থাকে
বিপৎসীমার কাছে আমাদের
ঝুম ঘনিষ্ঠ চুম্বন