কবি রায়ান নূরের সাক্ষাৎকার
কেমন আছেন?
যদি বলতে হয় খুব ভালো আছি ৷ ভালো থাকাটা চ্যালেঞ্জ ৷ একজন লেখককে সবদিক থেকেই ভালো থাকতে হয় ৷
লেখালেখির শুরুটা কিভাবে?
প্রথম কবিতা লিখেছিলাম ৷ তারপর মনে হয় একজন মানুষের অনেক কিছুর সম্ভাবনা থাকে ৷ সমাজে অনেক কিছু বলার থাকে ৷ আমি আমার কথাগুলো সমাজে প্রচারের জন্যই লেখালেখি শুরু করি ৷ কারণ পৃথিবীতে বহু মানুষের কথা কোনদিন কেউ জানতে পারে না ৷ একজন লেখক তা সামান্যই প্রকাশ করে ৷
প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে কিছু বলুন
প্রথম বই নিয়ে কিছু বলব না ৷ ‘কোহেকাফের সলতে’গল্পের বইটি বিভিন্ন মনস্তত্ত্ব ও বিভিন্ন রকমের চরিত্র নিয়ে লেখা ৷ এটি বাজারে এখন পাওয়া যায় না ৷ ‘সরীসৃপের হাসি’ উপন্যাস একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতার ফসল এবং অনেক পরীক্ষা চালিয়েছি ৷ এই উপন্যাসটি স্বপ্নের ভেতর আখ্যান ৷ ‘বেনসন সাহেবের বৈজ্ঞানিক কারখানা’ সায়েন্স ফিকশন কমিকস ৷ এতে ভবিষ্যতের পৃথিবী কেমন হবে তা উন্মোচন করেছি ৷ আমি লেখক হিসেবে সবসময় ভাঙতে ভালোবাসি ৷ বিভিন্ন রকম আবেগের সংমিশ্রনে রচিত এই বইগুলি ৷
এখন কি লিখছেন?
এখন টুকটাক কবিতা লিখি ৷ গল্পের বই প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে কিন্তু জীবিকার টানে, আর পড়াশুনার চাপে কুলে উঠতে পারছি না ৷ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি আপাতত ৷
আপনার লেখালেখির বিষয়বস্তু বা উপজীব্য নিয়ে বলুন।
আমার লেখালেখির বিষয়বস্তু মানুষের জীবন ৷ মানুষের আবেগ নিয়ে আমি খেলা করি ৷ বিভিন্ন তত্ত্বের পরীক্ষা চালাই৷ ভাষার পরিবর্তন করি ৷ তবে আমি কাল্পনিক অনুভূতি আবেগ নয় বরং বাস্তব জীবনকে বাস্তবতায় দেখি খানিকটা রঙ মিশিয়ে ৷ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মনস্তত্ত্ব আমার লেখাগুলোতে প্রাধান্য পায় ৷
আসন্ন বইমেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাই
বইমেলা কখনোই লেখকদের অনুকূলে ছিল না ৷ লেখকদের যে পরিবেশ থাকার কথা না নেই ৷ এখানে আশরাফ-আতরাফ গোত্র রয়েছে ৷ সব কিছুই যেন বানিজ্যিক ৷ লেখকদের উন্মোচন করবে বইমেলা কিন্তু তা হয় না, বরং তারা হোন বই বিক্রেতা ৷ এটা জাতির জন্য কলঙ্কজনক ৷
পাঠকদের থেকে একজন লেখকের প্রত্যাশা কি থাকে? আপনার ক্ষেত্রে তার প্রভাব কি?
আমি কখনও পাঠকের কথা বিবেচনা করে লিখি না ৷ যখন মনে করি সমাজে কিছু পরিবর্তন দরকার তখন একটা লেখা হাজির করি ৷ সকলেই যা লেখে আমি তা লিখি না ৷ একজন পাঠক সবসময় একটা জীবনের মধ্যে থাকে অথচ যে জীবন তার অজানা সেটিই তুলে ধরার চেষ্টা করি ৷ আমার পাঠকের সংখ্যা অনেক কম ৷
প্রকাশকদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য চাই।
প্রকাশকরা ব্যবসা করে ৷ এটা মানতে হবে ৷ কিন্তু একটা মানদণ্ড বিবেচনা করা উচিত ৷ তাদের কারণে ভালো লেখকরা বঞ্চিত হচ্ছে ৷ অর্থনৈতিক বৈষম্য একজন লেখককে পরিশ্রমে নিরুৎসাহিত করছে ৷ তাই বই প্রকাশে একটু কঠোর হওয়া উচিত ৷
কবি বা লেখকের কি স্বীকৃতি প্রয়োজন আছে? কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখেন?
যে চিন্তা করতে জানে সে সবসময় স্বীকৃত ৷ যার চিন্তার গভীরতা নেই, যৌক্তিকতা নেই ৷ ভাষার ব্যবহার আর মানুষের জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে ৷ তিনি আপাতত প্রতিষ্ঠিত হলেও আমি তা মনে করি না ৷ প্রত্যেকে কোন না কোন জীবনে কবিতা লেখেন ৷ কবিদের ব্যাপারে আমি কিছু বলব না ৷ তবে লেখক হওয়া কঠিন ৷ এটা জীবনের সাথে জুয়া খেলার মতো ৷
লোকে বলে কবিরা ভাতে মরে- এ নিয়ে কিছু বলুন
কথা ঠিক ৷ আবার ঠিক নয় ৷ একজন মানুষ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যখন কবিতা লেখে তা বালকসুলভ অনেকটা হয় ৷ আবার যে লিখতে লিখতে প্রতিষ্ঠিত হয় তার কবিতা পরিণত হয় ৷ তবে শুধু কবিতা লিখেই কবি হবার বাসনা এবং জীবনে আর সকল সম্ভাবনা ফেলে দেওয়া অনুচিত ৷ কবি হলো সেই একঝাঁক তীরের মতো ৷ যারটা লক্ষ্যভেদ করবে সে প্রতিষ্ঠিত হবে ৷ বাদবাকী ভাতে মরবে ৷
একজন লেখক কবির জন্য পড়াশোনা (সাহিত্য পাঠ) কতটুকু জরুরী?
অবশ্যই পড়াশুনা থাকতে হবে ৷ তবে তা পাঠক হিসেবে নয়, লেখক হিসেবে পড়তে হবে ৷ আমরা যেভাবে পড়ি তা লেখকদের মতো না ৷ শুধু পড়লেই লেখক হওয়া যায় না ৷ ভালোবাসা পাঠক যে ভালো লেখক তা নয়৷ বই ছাড়াও জীবনে বহু কিছু আছে ৷ লেখকদের চোখ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের থেকে ৷
নিজের লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা জানতে চাই।
আমার অনেক উচ্চাকাঙ্খা আছে লেখালেখি নিয়ে ৷ আমার লেখা নিয়ে যখন অনেকে বলে লেখা হয় নাই, ভাষা ঠিক নেই ৷ অনেকে সমালোচনা করে ৷ তখন আমি বুঝি তাদের দুর্বলতা কোন জায়গায় ৷ আমার লেখার সমালোচনা করার এখন পর্যন্ত কাওকে পাইনি ৷ পেলে বুঝতাম লেখকদের সবলতা কোথায়? তাই আমি আশাবাদী ৷
যারা লিখতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
যার লিখতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু কথা, লেখালেখি একটা পেশা ৷ তবে নিজের জীবিকা তৈরি করে তবে এখানে স্থির হওয়া দরকার ৷ জীবনকে নিকট থেকে দেখতে শিখতে হবে ৷ ভাষাকে আয়ত্ত করতে হবে ৷ আর লেখকদের সামাজিক হতে হবে ৷ লেখকদের নৈতিকতা হবে নিখুত ৷ কারণ লেখকরা জাতির বিবেক ৷
*রায়ান নূর: কবি, গল্পকার, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার।
আরো পড়ুন- কবি সুশান্ত হালদারের সাক্ষাৎকার