পদাবলিপ্রচ্ছদ

সাব্বির আহমদ এর কবিতাগুচ্ছ

মাংস ঝলসানোর ঘ্রাণ 

এক টুকরো আশা আঁকড়ে ধরে
বেঁচে আছি।
নেশার ঘোরে তুমি যে কবুল বলেছ ;
এজন্য পৃথিবী ব্যাপী কিছু ব্যহত বাতাস
ব্যথায় কাতরাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে।
দূরের প্রান্তর জুড়ে সর্ষে ফুলের ক্ষেত ;
তাকালেই দ্যাখি — তোমার চোখ,
মুখ আর নিতম্বের ছায়া এলে আছে।
এদিকে আমি,
কুন্ডলী পাকানো আগুনের পাশে।
লালায়িত চোখ, হাত বাড়ালেই ;
হাত বাড়ালেই তীব্র ঘ্রাণ রক্ত, মাংস
ঝলসানোর।

নিষ্পলক চোখ

ছায়া থেকে খসে পড়ছে সমূহ আয়ু।
দূরের দিগন্ত জুড়ে প্লাবনের বিস্তর ঢেউ।
ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে ক্লেদাক্ত
রক্তের দাগ।
রাস্তায় এখন ফুল ও মোহের গান।
পাখির পালকে ঝরে পড়ে পৌরানিক
রৌদ্রের মায়া।
যে বন ও লোকালয় তালিয়ে আছে
পানির তলে,
যে ফুল ও মানুশ ভাসতে ভাসতে দিক হারা,
যে বোনের কম্পিত শ্বাসে তরঙ্গ সঞ্চার হচ্ছে
ঘোলা পানির হৃদয়ে ;
কুটিল চোখ ভিনদেশ হতে দেখুক —
লক্ষ লক্ষ সাম্প্রিতির নিষ্পলক চোখ
হন্যে হয়ে উড়ে আসছে বন্যার্তদের দিকে।

মৃত্যু আঁকা 

অনেক দিন পরে দেখা তোমার মুখ,
কাঁটাতারে গাঁথা স্মৃতির অসুখ।
হাওয়ায় গুনগুন ব্যাথা —
নীল নীল দুখ ;
অনেক দিন পরে দেখা তোমার মুখ।
হলুদ ফুলের দুলে ওঠা নির্জীব বুক
সুভাষিত নাঙ্গা দুপুরের প্রেমময় রোদ।
হাওয়া হাওয়া ভাসে দূরের সবুজাভ পথ ;
কোমল ডগার নিস্ক্রিয় পাতা।
আমার চোখের কোনে
তোমার ডাগর চক্ষু ; গালে পড়া টোল আর
ওষ্ঠে সাক্ষাৎ মৃত্যু আঁকা।

গণিতের সূত্র 

তোমার নাভিমূল থেকে একটা প্রজাপতি
তিরতির করে বেরিয়ে পড়ছে ক্রমশ —
তার মাতাল করা গন্ধে পৃথিবী এখন
বিকারগস্ত যুবক ! হাসতে হাসতে ডুকে পড়ছে
জলন্ত সূর্যের ভিতরে। তীব্র গরমে মানুশ
পুড়ছে ভিষণ ভাবে। রমণ শেষের গড়িয়ে পড়া
একবিন্দু ঘাম —
তেইশ কোটি বছর লাগাতার ছুটার পর
একটা সুপ্ত আলোর সঙ্গে দেখা।
বইয়ের ভিতর ; অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে
গণিত। মানুশ দিনদিন কিভাবে নতজানু
হচ্ছে তার সূত্রের নিকট —
ভেবে দেখার বিষয়। তোমার জলার্দ্র গর্তে
স্খলিত পদার্থের লেজ ধরে কত লক্ষ প্রাণ —
প্রজাপতি হওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে
আলোর গতিতে!?

নোঙর

ঢেউয়ে ঢেউয়ে উপচে পড়ছে সময়।
উজানের খরস্রোতে ভেসে যাচ্ছে জলজ্জীবন।
বহুদিনের নোঙর ফেলা দেহে —
ক্ষয় ধরছে ধীরলয়ে।
সকরুণ ভাবে ফুটছে ফুল ভুল পথে ;
অসংখ্য স্মৃতির বনে।
হাওয়ায় খাবি খাচ্ছে নোনা গন্ধ।
ডানা খসে খসে পড়ছে অগুনিত ঋতুর দিন।
অজানার উদ্দেশ্য ছুটছে অবাধ্য চিল ;
ক্রমাগত জীবনের আয়ু ফুরাবার পথে।