একগুচ্ছ কবিতা- সোমা ঘোষ মণিকা
তুমি চলে যাবার পর
হয়তো দেখা হবে, কোন এক আশ্বিনে
জানি হবেই দেখা ,এ জন্মে নয়তো পরজন্মে।
জানিনা হয়তো তখন, তোমার নিদ্রাহীন চোখ প্রলাপ
বকে বকে কখন গড়িয়ে পড়বে ক্লান্ত অশ্রুধারা।
তবুও জানি দেখা হবে, আমাদের
হয়তো বা নিউইয়র্কের কোন রোবোটিকস প্রদর্শনী
কিংবা কোন হাঙ্গার গেইমের প্রতিনিধি
তুমি – আমি মুখোমুখি, তবুও হবে দেখা।
তুমি চলে যাবার পর; শালবনে আর কোকিল
হয়তো ডাকবে না, সেখানে হবে কোন নাইট ক্লাব।
জোনাকীর আলো, মিলিয়ে যাবে রঙিন ঝাড়ে
তবুও আমাদের দেখা হবে, এই পৃথিবীর বুকে,
নয়তো মঙ্গলের কোন তৃতীয় উপনিবেশে।
তুমি চলে যাবার পর, হয়তো কেটে যাবে এক
আলোক বর্ষ বসন্ত; নেপচুনে হয়তো চাষ হবে
ডেইজি নয়তো টিউলিপের লাল গোলাপী গুচ্ছ।
তবুও ধূমকেতুর বেগে, তোমার আমার জীবন
পথে, কোন একদিন হয়তো আমাদের দেখা হবে।
আমাদের এই গায়ে
আমাদের এই গায়ে, বইছে ছোট নদী কালনা
বাতাস কয় কথা,নানা ফুলের কত বায়না।
হলদে, সবুজ মুক্ত মাঠে, সরিষে আর ধানে-
গাঁথে রূপকথা গান, ধান শালিকের মিষ্টি সুরে।
আমাদের এই গায়ে, এখনো ঋতু খেলা করে
বসন্ত আর বর্ষায় প্রকৃতি নানা রঙে সাজে।
পলাশ- শিমুল- কৃষ্ণচূড়া বনে রক্ত আগুন ঝরে,
কদম,তমাল, হিজলে বর্ষারাণী সাজে স্নিগ্ধ রূপে।
আমাদের এই গায়ে, নবান্নে আর পৌষ- পার্বণে,
আউস, আমন ধানে কৃষকের গোলা উঠে ভরে।
গাজীর গান, বাউলগানে প্রাণ নাচে মহা আনন্দে,
নতুন চালের নতুন পিঠা মজা লাগে খেতে।
আমাদের এই গায়ে, সহজ সরল মানুষের হাটে,
এখনো বিবেক, আবেগ, মানুষ্যত্ব, হৃদয় বেঁচে আছে।
ভোরের সূর্য ফুটে, পাখি গায় ডালে ডালে,
মানুষ এখনো মানুষকে আপনার চেয়ে বেশি ভালোবাসে।
ছোট্ট পাখি অঞ্জনা
ছোট্ট পাখি অঞ্জনা
একটু কথা শোননা।
যদি যাও পাঠশালে
এনে দেবো লাল-জামা।
যদি করো খেলা
পাঠের সময় হেলা।
তোমার সাথে আড়ি
যাবোনা তোমার বাড়ি।
ছোট্ট পাখি অঞ্জনা
ধরোনা এতো বায়না
গেঁথে দেবো ঝুটি
হাসো যদি মিটিমিটি।
সকাল বিকাল পড়বে
মায়ের কথা শুনবে।
তবেই হবে বড়ো
করবে জগৎ আলো।
পিঁপড়ের ডিম
সবুজ ঘাসের চাতাল বেধে ধামনী পোকা একটু জিরোয়
এখনো পথ বাকি, যেপথে অনেকেই গেছে চলে।
সন্ধ্যা নামার অবকাশে, ঘাসফুল গুটিয়ে নেয় নিজেকে,
যেন লজ্জায় লাল রাঙা বধূ, পথিকের পদস্পর্শে।
গুটিপোকার মথ চিরে বেরোয় দু’একটি প্রজাপতি
পাখায় তাঁদের বর্ণিল নকশা, উড়ে এলোপাথাড়ি।
পথিক থামে, ভাবে আবার চলে সেই চিরচেনা পথে,
বিশাখা নগরির ফটকের গায়ে ফাটল ধরেছে
কালের গায়ে কাল লিখছে আজোও সময়নামা,
মহাশূন্যতায় ভর করে চলছে গোলক ধাঁধা।
মায়া কাটানোর মায়ায় চলছে জীবন,সময়-সসীম,
পা সরিয়ে দেখি পায়ের তলায় পিষ্ট পিঁপড়ের ডিম।
ভোর
সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে রাজ্যের ভীর, চারিদিকে পড়ুয়া
চীনে জোঁকের মতো বইয়ের গায়ে লেপ্টে, করছে
গিজগিজ।
শুয়ো পোকার মতোই বইকের অক্ষর, শব্দ সব কেটে,
পেটের ভিতরে করছে পাইকারী দরে চালান, অর্হনিশ।
গ্যাটে বা রুশো পড়ে আছে, সেলফের অন্ধকার
তাকে,
ম্যাথমেটিক্স, ইংলিশে স্ট্যূডেন্টদের মুখ যাচ্ছে আওড়ে।
বছর বছর ভাদ্রের কুৃুকুরীর মতোই কার্তিকে
ছানাপোনায় ভরে যায়, মাঠ, ঘাট, পথ,হাট
কতেক বাঁচে কতেক মরে, কে রাখে খোঁজ
ঠিক যেন এই সমতালেই, আজ পড়ছে তাঁরা
কিছু পাশ করে বেরিয়ে যাবে, জীবিকার তাগিদে
কিছু রয়ে যাবে সেমিস্টার ড্রপের লিস্টে।
কেউবা নিতান্তই শখের বসে হবে” আর্টের ছাত্র।
হাজার আলোর ঝলকানিতে রাত্রি হয়ে যাচ্ছে দিন
জানি এতো আলোতেও ফিরবে না, আমাদের সুদিন।
আলো এসে দুয়ারে দাঁড়াবে,হবে রাত্রির শেষ।
তবুও হবে না সেই ভোর।, যে ভোরে সকাল হয়
সুর্নিমল অনিঃশেষ।
আরো পড়ুন- রহিত ঘোষালের কবিতা