প্রচ্ছদসাক্ষাৎকার

কবি সুশান্ত হালদারের সাক্ষাৎকার

কেমন আছেন?

সুশান্ত হালদার: সৌজন্যমূলক সম্বোধনে বাহ্যগতভাবে ‘ভালো’ বলতেই হয়! আসলেই কি ভালো আছি?

 

লেখালেখির শুরুটা কিভাবে?

সুশান্ত হালদার: বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে কবিতা লিখি! এটা ভাবতেই কেমন যেন লাগে! তবে শৈশব থেকেই বাংলা সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক ছিল এবং প্রচুর বই পড়তাম। সুপ্ত একটা বাসনাও ছিল কিছু লিখবার এবং সেটা ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর প’রই কবিতার মাধ্যমে ঘটে।

 

প্রকাশিত বই গুলো নিয়ে কিছু বলুন?

সুশান্ত হালদার: এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ -মুক্তির গান, লাল সবুজের ভালোবাস, অনিবার্ণ, ধূলিঝড়, নীলা, স্মৃতির দেয়াল, বিষাদময় আকাশ, নির্বাক ভালোবাসা, নক্ষত্রের পতন, রক্তাক্ত জমিন, লালটিপ, অবন্তীকার কাছে খোলা চিঠি, স্মৃতির হ্যাঙ্গার, লাশকাটা ঘর, পুষ্পের আহাজারি, একটি যুদ্ধ ও প্রেম, আগুন বুকে পথ চলি, নীল মাধুরীর আত্মহত্যা (১৮ টি)। সবগুলোই আমার ভালো লাগার তবে পাঠককূল কি বলবেন? জানি না।

এর মধ্যে ‘নীলা’ এবং ‘অবন্তীকার কাছে খোলা চিঠি’ -একটু ব্যতিক্রম কারণ এই ২ টি বইয়ের কবিতা একই শিরোনামে লিখা হয়েছে। ‘নীলা’ কাব্যগ্রন্থ টি অভ্র এবং ‘অবন্তীকার কাছে খোলা চিঠি’ ফেস্টুন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ‘নীলা’ থেকে আবৃত্তিকার মাহিদুল ইসলাম মাহি ভাই সাথে ডুয়েট-কণ্ঠে আবৃত্তিকার লিজা গালিব চৌধুরী  এবং ‘অবন্তীকার কাছে খোলা চিঠি’ থেকে আবৃত্তিকার সাফিয়া খন্দকার রেখা আপা আবৃত্তির সিডি এ্যালবাম  করেছেন।

 

এখন কি লিখছেন?

সুশান্ত হালদার: ধারাবাহিকভাবে কবিতাই লিখছি। মাঝেমধ্যে নিবন্ধ ছোটগল্পও লিখি,  যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

 

আসন্ন বইমেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাই।

সুশান্ত হালদার:  বিগত বইমেলাগুলোতে প্রতিবারই বই এসছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবার কি হবে? এখনো বলতে পারছি না, তবে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত আছে।

 

পাঠকদের থেকে একজন লেখকের প্রত্যাশা কি থাকে? আপনার ক্ষেত্রে তার প্রভাব কি?

সুশান্ত হালদার:  একজন লেখকের কাছে বোদ্ধা পাঠকই দেবতা এবং আরাধনার মূল উৎস কারণ পাঠক যদি সৃষ্টির মূল্যায়ন না করেন তবে সেই সৃষ্টি বালুবনে মরিচিকা। আমার প্রত্যাশা- পাঠক ভালো লেখার মূল্যায়ন করুক এবং সৃষ্টিশীলতায় একজন লেখককে উদ্বুদ্ধ করুক। আমাদের দেশে বই পাঠে মানুষের অনীহা এর কারণও আছে সেক্ষেত্রে কবিতার পাঠকতো আরও কম। এহেন অবস্থায়ও যারা আমার কবিতা পড়েন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

 

প্রকাশকদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য চাই।

সুশান্ত হালদার: বিশ্ব বানিজ্যিকরণে এখন সবাই ব্যবসায়ী। প্রকাশনা সংস্থা তো একটা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কিন্তু আজকাল কেউ ধ্যানজ্ঞানের প্রতীক বই বের করে লস দিতে চায় না। এক্ষেত্রে কবিতার বই হলে তো প্রকাশকরা ইনভেস্ট করতেই চায় না অথচ আমাদের দেশের চিত্রটা এর উল্টো হওয়ারই কথা ছিল।

 

কবি বা লেখকের কি স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে? কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখেন?

সুশান্ত হালদার:  আমার মনে হয়, একজন কবি বা লেখক প্রকৃতির অংশ বিশেষ। একজন কবি বা লেখককে শুদ্ধ সুন্দর এবং ভালো মনের মানুষ হতে হয়। সেক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতার ধারাবাহিকতাই তার একমাত্র ভূমিকা হওয়া উচিত। কবি বা লেখক তো একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পদবী নয় যে স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সনদের মাধ্যমে এটা প্রদান করা হয়। আপনার সৃষ্টিই আপনাকে কালের গর্ভে টিকিয়ে রাখবে। এক্ষেত্রে স্বীকৃতির ব্যাপারটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। নাম নাই বললাম, কবি হিসেবে  যারা স্বীকৃতি/প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, তাঁরা- তাদের সৃষ্টিকর্ম দ্বারাই আমাদের মাঝে ভাস্বর হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

 

লোকে বলে কবিরা ভাতে মরে- এ নিয়ে কিছু বলুন।

সুশান্ত হালদার: এরকম একজনের নাম বলুন তো- যে না খেয়ে মারা গ্যাছে! কবিদের নিয়ে এরকম বানোয়াট কথাবর্তা কবিদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার হীন মনমানসিকতা।

 

একজন লেখক/কবির জন্য পড়াশোনা (সাহিত্য পাঠ) কতটুকু জরুরী?

সুশান্ত হালদার: পড়াশোনার তো বিকল্প নাই। জানতে হলে পড়তে হবে। বোধের প্রথম সোপানই হচ্ছে- পাঠ, পাঠ আর পাঠ। নিজকে জাগ্রত করতে হলেও পড়তে হবে। সৃষ্টিশীল মানুষকে তো আমৃত্যু এর মধ্যেই থাকতে হয়!

 

নিজের লেখালিখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা কি?

সুশান্ত হালদার: আসলে লেখালিখিটা প্রথমত নিজের জন্যই। লেখার মাধ্যমে নিজেকে জানতে পারি, সুস্থ সুন্দর রাখতেও পারি। তারপর যদি পাঠকের ভালো লাগে, তবে সেটা উপরি পাওনা। আত্মতৃপ্তিটা তখনই ধরা দেয় যখন নিজের সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের কথা বলতে পারি এবং পাঠক নামক কিছু মানুষের ভোতাবোধকে শাণিত করতে পারি। কারো নিকট থেকে প্রাপ্তি বা প্রত্যাশা না থাকাই ভালো, এতে প্রতারিত হবার আশঙ্কা নাই।

 

যারা লিখতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

সুশান্ত হালদার: যারা লিকতে চায়, তারা কন্টিনিউ করবে। এটা তো এক প্রকার ‘সাধনা’, জোর করে কিছু করা যাবে না। তাই এই প্রাপ্ত-শক্তিকে যথাযথভাবে দেশ এবং মানুষের কল্যানার্থেই কাজে লাগানো উচিত বলে আমি মনে করি!  ধন্যবাদ পরমপাঠকে

 

 

আরো পড়ুন- কবি অনন্ত পৃথ্বিরাজের সাক্ষাৎকার