পদাবলিপ্রচ্ছদ

ইউনুস এমরের কবিতা

ইউনুস এমরের কবিতা

১.

ইয়া ইলাহী, আমাকে শুধাও যদি
জবাব আমার শোন তবে নিরবধি
আমার উপর করেছি জুলুম, আমিই গোনাহগার
কী-বা ক্ষতি বাদশাহর।
তোমার হাতেই সৃষ্টি হয়েছি আমি,
সৃষ্টি ললাটে পাপী-কলঙ্ক
কেন তবে আজ, স্বামী?

বিদ্রোহী বলে দিয়েছো আমার বরাবর পরিচয়
এই পরিচয়ে পরিচিত আমি সারাটা জগৎময় ;
আমাকে তুমিই ব্যাখ্যা করেছো তোমার মনের মতো
আমার ব্যাখ্যা করোনি গ্রহণ, তোমাতেই তুমি রত।
সম্ভোগ, প্রভু, শিখিয়েছো তুমি, শিখিনি নিজের ভুলে
আমার মাথায় পাপের বোঝা তুমিই দিয়েছো তুলে।
দুটি চোখ মেলে তাকিয়েছি আমি কারার অন্তঃপুরে
শ্বাস ও বাতাস ব্যাপ্ত রয়েছে শয়তান-হৃদি জুড়ে।
হৃদয়-কারায় ক্ষুধার্ত আর মরিতে চাই না আমি
তাই তো আমিও শবাহার শেষে তৃপ্ত হয়েছি, স্বামী।

কিছু কি কমেছে তবুও তোমার বিশাল মুলুক হতে?
হুকুম আমার বড় কি, প্রভু হে, তোমার হুকুম হতে?
তোমাকে কি আমি উপোস রেখেছি আমার খাবার খেয়ে?
বঞ্চিত আমি করেছি তোমায় নিজের প্রাপ্য চেয়ে?

 

২.
জিঘাংসা আজো মেটেনি তোমার কতল করেও এই আমায়?
দুচোখ আমার পচিয়েছো তুমি, ভরিয়েছো শুধু মৃত্তিকায় !
কেশের মতন সরু সাঁকোখানি বানালে হে প্রভু, কোন্ ধ্যানে
সে সাঁকো পেরিয়ে যেতে বলো তুমি কেবল তোমারি সন্নিধানে।

কেশ-সরু এই সাঁকো দিয়ে হায়, মানুষ কখনো পার হয়ে যায়?
ঝোলে মাঝপথে, খসে পড়ে যায়, অথবা সে শুধু বাতাসে মিলায়।
মানুষ বানায় মানুষের সাঁকো মানুষের প্রয়োজনে
সে সাঁকো কেবল নয়তো দেখার অবাক নয়নে।
আমাকে শেকড়ে চেনো, চেনো সবভাবে
আমাকে আসল পথ তুমিই দেখাবে।

 

৩.
স্রষ্টা আছেন তামাম জাহান জুড়ে
কেউ তো চেনে না স্রষ্টাকে তবু সেই,
নিজের মধ্যে তুমি তাকে খুঁজে নাও
এক যে দুজন, তোমাতেও তাতে কোনো বিচ্ছেদ নেই।
আস্থা তোমার এই দুনিয়ার প্রতি
ভোগে ও বিলাসে সমর্পিত যে রতি
মিথ্যা বলো না, তাতেই তোমার ক্ষতি
তোমার সকল কথাতে কিন্তু সকল সত্য নেই।

পরকাল, সে তো দৃষ্টির বহু দূরে
সদাচারে বাঁচো ধরার অন্তঃপুরে
বিচ্ছেদ বাজে বেদনা-মথিত সুরে
যে জন গিয়েছে, আর তার ফেরা নেই।

দুনিয়ার বুকে মানুষ আসে ও যায়
শরবত পানে পথপাশে থমকায়
আসা ও যাওয়ার সাঁকো পার হতে চায়
মূর্খ যে-জন তার সে তো জানা নেই।

এসো তো তাহলে পরস্পরকে চিনি
হোক না সহজ আমাদের বিকিকিনি
প্রেমের বাধনে এসো সবে হই ঋণী
এই দুনিয়া কারোর জন্য নেই।

যদি বোঝো তুমি ইউনুসের কথা
যদি শোনো তার মানে ও বারতা
সুষ্ঠু বাঁচাই জীবনের প্রথা
এ ভুবনে কারো আপন ভবন নেই।

 

৪.
আমি ইহকাল আমি পরকাল আমিই জীবনদাতা
অজানার পথে হারালো যে জন, আমিই যে তার ত্রাতা।
সিদ্ধান্ত তো নিয়েছি,আমিই, সব রহস্য আমার
কার আছে আর অধিকার জানবার?
অন্ধ আমাকে দেখে ফেলে, হায়, যখন পালাই আমি
হৃদয়ে বন্দী হয়ে পড়ি তার, আমিই যে তার ত্রাতা।
এই পৃথিবীকে বানিয়েছি আমি সমতল শালা
গেঁথেছি সেখানে পাহাড়ের মালা
আকাশকে আমি বানিয়েছি এক ধনুকী খিলান,
আধার আমিই সর্বশক্তির, — আমিই সবার ত্রাতা।

পথদিশা দিই অযুত প্রেমিকে, ধর্মের পথ আর ঈমান
মানব-হৃদয়ে কুফরী এবং ইসলামী ঈমান আমার দান;
মানুষের মাঝে নাজেল করেছি পুত-পবিত্র চার কিতাব
সবার উপরে রয়েছে কোরান, আমি যে সবার ত্রাতা।

সকল কিছুকে বেঁধেছি আমিই বন্ধুত্বের ডোরে
সব কিছু ছেড়ে মালী আমি আজ ধরার বাগান-ক্রোড়ে:
নাদান ইউনুস বলেনি এ-সব, এ-সবই তাঁর বাণী –
যে-জন মানে না সেই তো কাফের—
আমি ইহকাল আমি পরকাল আমি যে সবার ত্রাতা।

 

আরও পড়ুন- ইবনে আরাবীর বাণী