পদাবলিপ্রচ্ছদ

জামিল হাদীর কবিতা

ক্লোজড TEA বায়োস্কোপ 

জীবনটা থ্রেড টেপের মতো হয়ে গেছে।
ম্যাল ফাংশান এড়াতে আমাকে অনেকেই নিয়ে যায়।
কিন্তু তাদের ক্ষরণ আমি রোধ করতে পারি না।
উলটো বর্ষণ বাড়িয়ে দিই।
তাদের অভিনয়ের ক্ষেত ডুবে যায়। ডুবে যায় বন্যা বিনাই।

তারা ভীষণ মর্মাহত হয়।
আমাকে ছিঁড়ে, কেটে, শতভাগ করে ফেলে দেয় আবর্জনার বাস্কেটে।

ওখানে গিয়ে আমি আমার মতো অনেককে খুঁজে পাই।
সবাই মিলে মহল্লা বানিয়ে হল্লা করি।

সিটি কর্পোরেশনের গাড়িটা হাসে।
আমাদের লাশ পুড়িয়ে দেওয়া দেখতে দেখতে বেচারা বিরক্ত, ক্লান্ত।

 

 

প্রতিবেশী

আমরা দুইজন প্রতিবেশী ছিলাম।
দশকূলে আমাদের কেউ ছিলো না।

তবে
লোকটার বাসায় দুটো কুকুর ছিলো।
কবুতর ছিলো ১৭ জোড়া।
বিড়াল ছিলো, লাভ বার্ড ছিলো।
অ্যাকুরিয়ামে মাছও ছিলো ভীষণ দামী দামী।

এতোকিছু থাকার পরও তার শান শওকত দেখে আমি যখন অবাক হতাম, মুগ্ধ হতাম,
আমার সেই আশ্চর্য হয়ে যাওয়া দৃষ্টিকে লোকটা অনুবাদ করতে পারতো না।
লোভাতুর ভাবতো আমাকে।

তাই সে চুনের হাড়ি বসালো গেটে।
ঘরের কোনায় কোনায় সিসি ক্যামেরার গায়ে
কু-নজর হটানোর জন্য তাবিজ ঝুলিয়ে দিলো।
আমাকে দেখলেই কুকুর লেলিয়ে দিতো।
অথবা নিজেই কেমন কুকুরের মতো হয়ে যেতো!

একদিন ঝুমবৃষ্টির রাতে আমি আচমকা মরে গেলাম।
মহল্লার অন্য সকলের সাথে লোকটাও এলো আমার জানাযায়।
অনেক ভালো ভালো কথা বললো আমাকে নিয়ে।

বাড়ি ফেরার পথে আমার ভাঙাচোরা বাড়িটার চারদিকে কেমন করে যেন চোখ বোলাতে থাকলো লোকটা।

আহারে! বেচারা বোধহয় খুব মুগ্ধ হয়েছে আমার টানাপোড়েনের জীবন দেখে।

আমিই শুধু শুধু ওকে ওর মতো করে লোভী ভাবছি!
খোদার লানত পড়ুক আমার ওপরে!

 

ভিনটেজ 

ট্র‍্যাংক থেকে শীতের চাদর বের করে রোদ পোহাতে দিতে গিয়ে বের হয়ে এলো একটা চিঠি। চিঠিতে কোনো নাম তারিখ না থাকলেও বোঝা যাচ্ছিলো অনেক পুরোনো একটা চিঠি।

তাতে লেখা –

আব্বা এসেছেন। কালিবাউস মাছ নিয়ে এসেছেন। আব্বা ঝাল বেশি খায় এতো আপনি জানেন। আমি রাঁধতে বসে দেখতেছি গুড়া মরিচ নাই। চিঠিটা জয়নালের হাত দিয়ে জলদি দোকানে দিয়ে পাঠালাম। চিঠিটা পড়া মাত্র আগুন চোখে আমার কথা ভেবে কিছু বকাঝকা করবেন মনে মনে। ওটাই মশলা। ওতেই হবে।

জলদি আসবেন বাসায়। বাপ-বেটায় একসাথে কতদিন খান না! আসার সময় পেয়ারা নিয়ে আসবেন। আজ বাসায় আসলে আর দোকানে যেতে দেবো না। ছোটন নতুন লুডুর কোর্ট কিনে পাঠিয়েছে। আজ আপনার গুটি কেটে দফারফা করে দেবো।

 

আরো পড়ুন- রুশিয়া জামান রত্নার কবিতা